দেউলিয়া হয়ে গেছে বিশ্বের বৃহত্তম সিফুড রেস্তোরাঁ চেইন রেড লবস্টার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে সংস্থাটি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পারার ব্যর্থতা এবং ঋণের বিশাল বোঝার চাপে শেষ পর্যন্ত ব্যবসাই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

মধ্যবিত্ত মার্কিনিদের হাতে সুলভ দামে সাগরের সুস্বাদু গলদা চিংড়ি তুলে দেওয়ার জন্য বিখ্যাত ছিল রেড লবস্টার। ধীরে ধীরে এটি হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিফুড রেস্তোরাঁ চেইন। কিন্তু হঠাৎ খেঁই হারায় তারা। নানা কারণে বাড়তে থাকে লোকসান। একে একে বন্ধ হতে থাকে বিভিন্ন শাখা। এরপরও চেষ্টা করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পারলো না, শেষ পর্যন্ত ব্যবসাই গুঁটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি।

একটি ভুল সিদ্ধান্ত
রেড লবস্টারের একটি বাৎসরিক সীমিত সময়ের মেন্যু ছিল এন্ডলেস শ্রিম্প। প্রায় ২০ বছর ধরে এই নিয়মে ব্যবসা করে গেছে তারা। কিন্তু এতে বাগড়া দেয় রেড লবস্টারের সবচেয়ে বড় অংশীদার থাই ইউনিয়ন। ব্যাংকক-ভিত্তিক ক্যানড সিফুড কোম্পানিটি রেড লবস্টারের অত্যন্ত জনপ্রিয় এন্ডলেস শ্রিম্প মেন্যুকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ধরা বিপুল পরিমাণ চিংড়ি বিক্রির চেষ্টা করে।

২০২০ সালে রেড লবস্টারের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হয়ে ওঠে থাই ইউনিয়ন। ফলে তাদের কথা ফেলতে পারেনি রেড লবস্টার কর্তৃপক্ষ। গত বছর ২০ ডলারের এন্ডলেস শ্রিম্পকে নিয়মিত মেন্যুতে পরিণত করে রেড লবস্টার।কিন্তু এই সিদ্ধান্তের কারণে পাক্কা ১ কোটি ১০ লাখ ডলার গচ্চা যায় রেড লবস্টারের।গত ১৯ মে যুক্তরাষ্ট্রে দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছে সংস্থাটি। ওই আবেদনের বিবরণীতেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, থাই ইউনিয়নের প্রভাব কতটা ভুগিয়েছে তাদের।

রেড লবস্টার বলেছে, প্রথমে তারা এন্ডলেস শ্রিম্পকে নিয়মিত মেন্যুতে পরিণত করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু তারপরও এটি চালু করা হয়।

শুধু এন্ডলেস শ্রিম্পকে নিয়মিত মেন্যু করেই ক্ষান্ত থাকেনি থাই ইউনিয়ন। তাদের নির্দেশনায় নতুন সিইও (প্রধান নির্বাহী) নিয়োগ দেওয়া হয় রেড লবস্টারে। এরপর রেড লবস্টার তাদের চিংড়ি সরবরাহকারী দুটি সংস্থাকে বাদ দেয় এবং চিংড়ি সরবরাহের পুরো বিষয়টি একচেটিয়াভাবে থাই ইউনিয়নের হাতে ছেড়ে দেয়। এর কারণে রেড লবস্টারের খরচ বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে।

দেউলিয়াত্বের আবেদনে বলা হয়েছে, আগে আনুমানিক চাহিদার ভিত্তিতে সরবরাহকারীদের বাছাই করতো রেড লবস্টার কর্তৃপক্ষ। কিন্তু থাই ইউনিয়নের হাতে এককভাবে চিংড়ি সরবরাহ ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ায় ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়নি।

‘এই সিদ্ধান্তটি রেড লবস্টারের জন্য পরিচালনা ও আর্থিক উভয় ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে এবং সংস্থাকে থাই ইউনিয়নের অসুবিধাজনক সরবরাহ দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত করে।’

নেপথ্যে আরও কারণ
রেড লবস্টারের পতনের জন্য শুধু এন্ডলেস শ্রিম্পের ভুল প্রচারণাই দায়ী নয়। এর পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন রেস্তোরাঁ বিশেষজ্ঞরা, যার মধ্যে রেড লবস্টার ও থাই ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব অন্যতম।

রেড লবস্টার তার দেউলিয়াত্ব আবেদনে বলেছে, সাবেক ম্যানেজমেন্টের কিছু অপারেশনাল সিদ্ধান্ত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে [রেড লবস্টারের] আর্থিক পরিস্থিতির ক্ষতি করেছে।

সিএনএন’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক অ্যালেক্স সাসকিন্ড বলেন, রেড লবস্টার ছিল নৈমিত্তিক ডাইনিংয়ের ভিত্তি। মার্কিন ভোক্তারা যেভাবে সামুদ্রিক খাবার খায়, তাতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল তারা। রেড লবস্টার বেবি বুমারদের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জন্মগ্রহণকারী) মধ্যে অবিশ্বাস্য জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু তারা নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারেনি।

সূত্র: সিএনএন

আরাও পড়ুন... সেরা উক্তি