জাজিরা এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) শামীম উল ইসলাম জয় বলেন, ‘এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য চট্টগ্রাম রুটের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হবে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। নতুন এয়ারক্রাফট যুক্ত হলে আবার ফ্লাইট চালু হতে পারে।’

এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে আগামী সোমবার (১ জানুয়ারি) থেকে চট্টগ্রাম-কুয়েত-জেদ্দা রুটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দিচ্ছে জাজিরা এয়ারওয়েজ। আগামী রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এই এয়ারওয়েজের শেষ ফ্লাইটটি ছেড়ে যাবে।

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত প্রায় দুই বছরে এই এয়ারওয়েজ ঘিরে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ এয়ারলাইন্সটির সেবা বন্ধ হলে দুর্ভোগে পড়তে হবে চট্টগ্রাম ও আশপাশের কুয়েতপ্রবাসী ও যাত্রীদের। এর প্রভাবে বেড়ে যেতে পারে অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর বিমান ভাড়াও।

কুয়েতের লো কস্ট ক্যারিয়ার জাজিরা এয়ারওয়েজ ৪৬ তম ডেস্টিনেশন চট্টগ্রাম-কুয়েত-জেদ্দা রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করে ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি। যাত্রীর চাপ বাড়ায় সপ্তাহে ফ্লাইট সংখ্যা ৩টি থেকে বাড়িয়ে ৫টি করাছিল সংস্থাটি।

জাজিরা এয়ারওয়েজ বাংলাদেশের ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) শামীম উল ইসলাম জয় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য চট্টগ্রাম রুটের ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হবে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। নতুন এয়ারক্রাফট যুক্ত হলে আবার ফ্লাইট চালু হতে পারে।’

জাজিরা এয়ারওয়েজের তথ্য অনুযায়ী, এই পথে এ৩২০ নিও এয়ারবাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করে আসছিল জাজিরা এয়ারওয়েজ। এয়ারবাসটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ১৭৪ জন। একজন যাত্রী ৩০ কেজি পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ পায় এই এয়ারওয়েজে।

শুরুতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সোমবার, বুধবার ও শুক্রবার ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। যাত্রী চাহিদা বেড়ে গেলে সপ্তাহে আরো দুইটি ফ্লাইট বাড়ানো হয়। সবশেষে তিনটি ফ্লাইট চালু ছিল।

শিডিউল অনুযায়ী কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এক ঘণ্টা পর সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে ফিরতি পথে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কুয়েতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। সেখান থেকে জেদ্দায় অবতরণ করে।

কুয়েতের পাশাপাশি হজ্ব এবং ওমরার যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়তা পায় এই বিমান সংস্থা। কারণ, চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলইন্স ছাড়া অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে সরাসরি জেদ্দা যাওয়ার সুযোগ ছিল না।

হজ্জ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চালু হওয়ার পর থেকেই জাজিরা এয়ারলাইন্সের চাহিদা প্রচুর। ওমরা হজ্ব যাত্রীরা এই বিমানে স্বস্থিবোধ করতেন। এখন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্য বিমানসংস্থাগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই এয়ারলাইন্সটি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।

জাজিরা এয়ারওয়েজের বেশিরভাগ যাত্রী জেদ্দা ও মধ্যপ্রাচ্যগামী। চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে ওমান ওয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়া। জাজিরা এয়ারওয়েজে চট্টগ্রামের যাত্রীরা কুয়েত এয়ারপোর্ট থেকে কানেকশন নিয়ে দুবাই, দাম্মাম, জেদ্দা, দোহা, মাস্কাটসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম থেকে কুয়েত হয়ে মধ্যপ্রাচ্য যেতে অন্য বিমান সংস্থার চেয়ে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় বেশি লাগে জাজিরা এয়ারওয়েজে। বিমান ভাড়া অন্য বিমান সংস্থার তুলনায় প্রায় একই। সময় ও দুরত্ব বেশি হওয়ায় যাত্রী পরিবহনের অতিরিক্ত ব্যয়ও ফ্লাইট বন্ধ করার একটি কারণ বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

জাজিরা এয়ারোয়েজ চালু হওয়ার পর ফেয়ার ছিল (আসা-যাওয়া ভাড়া) ৮০ হাজার টাকারও বেশি। কিন্তু সেটি এখন ৬০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। কুয়েতের চেয়েও বেশি যাত্রী জেদ্দার পাওয়া যাচ্ছে। তাতে করে ফুয়েল খরচ ও অন্যান্য খরচ পোষানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে এই বিমান সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম এভিয়েশন ক্লাবের সভাপতি আসিফ চৌধুরী বলেন, ‘স্বল্প সময়ে যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়তা ও আস্থা অর্জন করেছিল জাজিরা এয়ারলাইন্স। এই অঞ্চলের যাত্রীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে খুব শীঘ্রই যাত্রী সেবা শুরু করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ‘ফ্লাইট বন্ধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে থেকে আমরা এখনো লিখিতভাবে কোন তথ্য পাইনি।’

বাংলা উক্তি