২০০৩ সালেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির মোট জনসংখ্যা ছিল সাত লাখের নিচে। জনসংখ্যা বেড়ে ২৫ লাখে পৌঁছলেও এর সিংহভাগই প্রবাসী। এর বড় অংশ আবার বাংলাদেশী। ২ লাখ ৮০ হাজার নাগরিক নিয়ে বাংলাদেশীরাই এখন কাতারের চতুর্থ বৃহত্তম জনগোষ্ঠী।

দেশটির উন্নয়ন পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের (এমডিপিএস) হিসাবে, ৮৭টি দেশের নাগরিকদের বসবাস রয়েছে কাতারে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে কাতারে প্রথম অবস্থান ভারতীয়দের। দেশটিতে অবস্থানকারী ভারতীয়র সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ, যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। এর পরই রয়েছে নেপাল। কাতারের মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বা সাড়ে তিন লাখ নেপালি। কাতারে বাংলাদেশী রয়েছেন দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর কাতারের স্থানীয় জনগণ মোট বসবাসকারীর মাত্র ১২ দশমিক ১ শতাংশ, সংখ্যায় যা ৩ লাখ ১৩ হাজার।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ও ভিশন ২০৩০ ঘিরে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে কাতার। এ কর্মযজ্ঞ চলছে অভিবাসী শ্রমিকদের দিয়ে। এ কারণে গত ১০ বছরে বিপুল সংখ্যক বিদেশী শ্রমিক কাতারে গেছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশও। দেশটিতে অভিবাসী বৃদ্ধির হারে প্রথম অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশী নাগরিকরা।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালে দেশটিতে বাংলাদেশী নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজারে। অর্থাৎ তিন বছরেই কাতারে বাংলাদেশী নাগরিক বেড়েছে ১০৪ শতাংশ।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী শ্রমিকের ২২ শতাংশের গন্তব্য ছিল কাতার। ২০১৬ সালে বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে কাতারেই গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৩৮২ জন। আর চলতি বছরের এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কাতারে গেছেন ৫১ হাজার ৮৪৯ জন শ্রমিক। ২০১৫ সালে দেশটিতে পাড়ি দিয়েছিলেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৬৫ জন বাংলাদেশী শ্রমিক।

বাংলাদেশী জনশক্তির গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য হওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সেরও বড় উত্স কাতার। ২০১৬ সালে দেশের প্রবাসী আয়ের ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ আসে কাতার থেকে। ওই বছর বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা দেশে পাঠান ১ হাজার ৩৬০ কোটি ৯৭ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এর মধ্যে কাতার প্রবাসীরা পাঠান ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলারের বেশি। তবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৫ শতাংশ এসেছে কাতার থেকে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে ৪১১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে কাতার থেকে এসেছে ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।

কাতারে বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকাংশই নির্মাণ খাতের হলেও পেশাজীবী কর্মী পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে। এ নিয়ে গত বছর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে যৌথ কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। নার্স, চিকিত্সক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, সেলস পারসনসহ সব খাতে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। আলোচনা হয় সব খাতে দক্ষ নারী কর্মী ও গৃহকর্মী পাঠানোর বিষয়েও।

জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন বলেন, নির্মাণ খাতের পাশাপাশি কাতারে পেশাজীবী জনশক্তিরও চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। তবে এজন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

আরাও পড়ুন... সেরা উক্তি