কিশোরগঞ্জ হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকেন। সেখানে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা। শ্রমের বিনিময়ে বৈদিশিক মুদ্রা আয় করে দেশে পাঠাচ্ছেন পরিবারের সুখের জন্য। কিন্তু, এবার সেই সুখ যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের সাহেবের চর নয়াপাড়া গ্রামের একটি পরিবারে।

সেই পরিবারের তিন ভাই কয়েক বছর ধরে পারিবারের অভাব নিরসনে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন সৌদি আরবে। তাদের কাজে, সততায় ও নিষ্ঠার জন্য অনেক খুশি মালিক। এই সম্পর্কের টানে বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন তাদের মালিক আহাম্মদ হলিবি (৬০)। শুধু যে তাই তা নয়, ছেলেকেও সঙ্গে নিয়ে এসেছিন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের আল হাসার খালিদিয়া এলাকার বাসিন্দা আহাম্মদ হলিবি। তিনি তার ছেলে আব্দুল লিল হলিবিকে সঙ্গে নিয়ে তিনদিনের সফরে মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোরে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণ করেন।

পরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে হোসেনপুর সদরের ঢেঁকিয়া খেলার মাঠে আসেন। সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে তারা সাহেবের চর নয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছান। এসময় তাদের দেখতে সব বয়সী মানুষ জড়ো হন।

স্থানীয়রা জানান, সাহেবের চর নয়াপাড়া গ্রামরে মৃত চান মিয়ার তিন ছেলে খাইরুল ইসলাম (৪০), আব্দুল হামিদ (৩৫) ও সারোয়ার হোসেন সাহিদ (৩১)। ২০ বছর আগে খাইরুল সৌদি আরবে কাজের সন্ধানে যান।

সাত বছর হলো তার ছোট দুই ভাই হামিদ ও সারোয়ারও সেখানে যান। তারা সেখানে সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের আল হাসার খালিদিয়া এলাকার শামীম আহাম্মদ হলিবির পরিবারের কাজে যোগ দেন। সেখানে তারা কৃষিকাজ করেন। আর সারোয়ার গাড়িচালক হিসেবে কাজ করছেন।

আব্দুল হামিদ জানান, আমাদের মালিক খুবই ভালো মানুষ। তিনি আমাদের তিন ভাইকে খুবই ভালোবাসেন। আমাদেরকে নিজের সন্তানের মতোই স্নেহ করেন। কাজের সুবাদে আমাদের সঙ্গে উনার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। অনেকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন, আমাদের দেশে আসবেন।আমি প্রথমে উনার কথায় কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। এক সপ্তাহ আগে দেশে ফিরে প্রস্তুতি নিয়ে উনাকে আমন্ত্রণ জানাই।

তারপর ছোট ভাই খাইরুল ভোরে মালিক ও তার ছেলেকে নিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। তারপর সেখান থেকে তাদের বরণ করে হেলিকপ্টারযোগে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমিসহ আমার পরিবারের সবাই অনেক খুশি হয়েছেন উনারা এসেছেন এ কারণে। এখানে আসার পর অনেক মানুষ তাদের দেখতে ভিড় করছেন। আমার মালিক তো আরবিতে কথা বলেন, তাই যারা তার সঙ্গে কথা বলতে চান তাদের আমরা দুইভাই সহযোগিতা করছি।

সৌদি আরবের নাগরিক শামীম আহাম্মদ হলিবি বলেন, ওরা তিনভাই আমার পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। আমি তাদের প্রতি অনেক আস্থাশীল। আমি তাদের কাজের দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার জন্য আমার পরিবারের সদস্যই মনে করি।

আমার পরিবারের সবাই তাদের অনেক ভালোবাসে। তাদেরকে দেখতে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছি। আমাদের প্রতি তাদের ভালোবাসার টান আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে।

শামীম আহাম্মদ হলিবির ছেলে আব্দুল লিল হলিবি বলেন, তারা তিন ভাই এবং আমি কেউ আলাদা নই। আমাদের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করে তারাও আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেছে। আমাদের প্রতিদিন যা খাবার খাই তাদেরওকে তাই খেতে দেওয়া হয়। তারাও আমাদের পরিবারের সবাইকে অনেক সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসে। তাদের পরিবারের অন্যদের দেখতে আমরা বাবা-ছেলে এখানে এসেছি। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।

স্থানীয় অনেকেই আছেন যারা প্রবাস জীবন শেষ করে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। তারা জানান, আমরা প্রথমে বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। আমরাও তো সৌদি আরব, কাতার, দুবাইয়ে বিভিন্ন মালিকের অধীনে কাজ করেছি।

কিন্তু কোনোদিন তাদের দেখাও পাইনি। অথচ এই তিনভাই তাদের কাজের মাধ্যমে মালিকের মন জয় করেছেন। তাইতো মালিক তার ছেলেকে নিয়ে চলে এসেছেন। এমন মালিকের অধীনে কাজ করাও ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা খুবই খুশি হয়েছি।

আমের উদ্দিন প্রবাসী তিন ভাইয়ের সম্পর্কে খালু। তিনি বলেন, তেইশ বছর আমি শামীম আহাম্মদ হলিবির পরিবারে কাজ করেছি। উনি এবং তার পরিবারের সবাই খুব ভালো মানুষ। তারপর দেশে ফিরে খাইরুলকে সেখানে নিয়ে যাই।

এরপর একে একে তারা দুই ভাইও সেখানে যায়। আসলে ওদের তিনভাইয়ের প্রতি আস্থা ছিল উনার। আর তারাও তাদের কাজের সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে মালিকের মন জয় করে নিয়েছে। আজকে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে আমাদের গ্রামে বেড়াতে এসেছেন, আমি খুবই আনন্দিত।

মা নিয়ে উক্তি বাংলা উক্তি