বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে বিলাসী ধাতু সোনার দাম। ভূরাজনৈতিক কারণে ডলারের দরের হেরফের, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নিরাপদ রিজার্ভ হিসেবে সোনা কেনায় তৎপরতা ও এশিয়ার বাজারে সোনার চাহিদা বাড়ায় রেকর্ড মূল্যে সোনার দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এর ফলে বাংলাদেশেও বেড়েছে সোনার দাম। বুধবার সোনার দাম নির্ধারণ করে নতুন মূল্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। ভরিতে ২ হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৯০৮ টাকা।

নতুন এ দাম আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। আর প্রতি ভরি ২১ ক্যারেট সোনা ২ হাজার ৯৯ টাকা বেড়ে বিক্রি হবে ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকায়।

এ ছাড়া বাজুস ১৮ ক্যারেট সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৮০৮ টাকা বাড়িয়েছে। তাতে এই মানের সোনার নতুন দাম হবে ভরিতে ৯২ হাজার ৩৭৯ টাকা। এ ছাড়া প্রতি ভরি সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬ হাজার ৯৮২ টাকায় পৌঁছাবে। তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

দাম কমানোর আগে আজ পর্যন্ত দেশের বাজারে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেটের সোনা ১ লাখ ১০ হাজার ৬৯১ টাকায়, ২১ ক্যারেট সোনা ১ লাখ ৫ হাজার ৬৭৬ টাকায়, ১৮ ক্যারেট ৯০ হাজার ৫৭১ টাকায় এবং সনাতন পদ্ধতির সোনা ৭৫ হাজার ৪৬৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

গত ২০২৩ সালে দেশের বাজারে সোনার দাম দফায় দফায় বেড়েছিল। ফলে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

জুয়েলার্স সমিতির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩ সালে সব মিলিয়ে ২৯ বার সোনার দামে সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ বার দাম কমানো ও ১৮ বার বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের শুরুতে (জানুয়ারি) ভালো মানের, অর্থাৎ হলমার্ক করা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ছিল ৮৮ হাজার ৪১৩ টাকা। এরপর কয়েক দফা দাম বাড়ার পর গত ২১ জুলাই দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো প্রতি ভরি সোনার দাম লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

রয়টার্স বলছে, মূলত দুটি কারণে সোনার দাম বাড়ছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ মুদ্রানীতির রাশ আলগা করবে—এমন খবর অনেক দিন ধরে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সেই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছে।

এশিয়ার বাজারে সোনার চাহিদা বেশি এবং এখন তা আরও বাড়ছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিরাপদ রিজার্ভ হিসেবে সোনা কিনছে। গত আট মাসে তারা যত সোনা বিক্রি করেছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে কিনেছে। মঙ্গলবার (গতকাল) সোনার স্পট মূল্য শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ১৪১ ডলারে উঠে যায়; এরপর তা আবার ২ হাজার ১৩০ ডলারে নেমে আসে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সোনার দাম এযাবৎকালের সর্বোচ্চ আউন্সপ্রতি ২ হাজার ১৫০ ডলারে উঠেছিল।

ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর সোনার দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৩০০ ডলারে উঠে যাবে। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমাতে যাচ্ছে এবং তার জেরে সোনার বাজার সেদিকে ধাবিত হবে, অর্থাৎ দাম এই পর্যায়ে উঠে যাবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সোনার দাম এই পর্যায়ে উঠবে তা হয়তো নয়; সম্ভবত আগামী ছয় মাসের মধ্যে সোনার দাম ২ হাজার ৩০০ ডলারে উঠবে।

এদিকে সোনার চাহিদার আরেকটি বড় জায়গা হচ্ছে সোনা–সমর্থিত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে ইটিএফ ফান্ডের সূচক কমছে। বিশ্বের বৃহত্তম স্বর্ণ-সমর্থিত ইটিএফ এসপিডিআর গোল্ডের সূচক চলতি বছর ৭ শতাংশ কমেছে।

সোনার সঙ্গে স্পট মার্কেটে রুপার দামও বাড়ছে। সোমবার থেকে এই ধারা শুরু হয়েছে এবং সর্বশেষ রুপার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ২৩ দশমিক ৯৪ ডলার, ২৮ ডিসেম্বরের পর যা সর্বোচ্চ।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শুধু সোনার দাম বাড়ছে না, তার সঙ্গে রুপার মতো ধাতুর দামও বাড়ছে। সে কারণে তারা মনে করছেন, এবার স্বর্ণের মূল্যবৃদ্ধির ধারা টেকসই হবে।

যেকোনো পণ্যের দাম ওঠানামা নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপর। তবে সোনার ক্ষেত্রে যোগ হয় ভোক্তার আচরণ। কেউ যদি মনে করেন, সামনে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তাহলে অর্থের ওপর ভরসা কমে যায়; কারণ মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থের মূল্যমান হ্রাস পায়। তখন মনে করা হয়, এমন কিছু পণ্য কিনে রাখতে হবে, যার ক্ষয় নেই।

এমন নয় যে বছর বছর সোনার খনি থেকে সোনার সরবরাহ আসতেই থাকে, তাই এখানে চাহিদা-জোগানের সম্পর্কের তুলনায় ভোক্তার আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখন মূল্যস্ফীতির হার উন্নত দেশগুলোতে কমতির দিকে থাকলেও নীতি সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা সোনার প্রতি আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

মা নিয়ে উক্তি বাংলা উক্তি